বিজ্ঞাপন
কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে যেসব খাবার খাবেন
বিজ্ঞাপন
কিডনি মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এই অঙ্গটি শরীরের যাবতীয় খারাপ পদার্থ শরীরের বাইরে বের করে দেয়। তবে এরপরও মানুষ এই অঙ্গ নিয়ে এতটাও ভাবতে চান না। সেই কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা এখন বাড়ছে। কিডনি শুধু রক্ত পরিশোধনেই সাহায্য করে না, এর পাশাপাশি শরীরে তরল ও বিভিন্ন প্রকার লবণের ভারসাম্য, রক্ত উত্পাদনে সহায়তা এবং শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যথাযথভাবে কাজ করছে কিনা কিংবা কিডনির স্বাভাবিক কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য কিডনি সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণের ওপর আমাদের নজর রাখা এবং সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিডনি বিভিন্ন কারণে সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্র্র্রাইটিস, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, প্রস্রাবের নালিতে বাধার কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। এ ছাড়াও জন্মগত ত্রুটি এবং বংশগত কারণেও কিছু কিডনি রোগ হয়ে থাকে। অনেক কিডনি রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। অনেক কিডনি রোগ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা এর অগ্রসরতা ধীর করা সম্ভব। কিডনি রোগের উপসর্গসমূহ বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়।
কিডনি মূত্র তৈরি করে এবং যখন কিডনি আক্রান্ত হয় তখন এতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। রাতের বেলায় অতিরিক্ত প্রস্রাব, প্রস্রাব ফেনাযুক্ত হতে পারে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে, প্রস্রাবের মধ্যে রক্ত থাকতে পারে এবং প্রস্রাবের রং লালচে হতে পারে, প্রস্রাব ধীরে ধীরে, অসম্পূর্ণ ও ব্যথাযুক্ত এবং বারে বারে হতে পারে।
সাময়িক অথবা দীর্ঘমেয়াদি বিকল কিডনি শরীরে অতিরিক্ত পানি বের করতে পারে না। শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন— পায়ের পাতা, গিরা, দুই পা, মুখ, পেট এমনকি বুকেও পানি জমে যায়। কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির মাংসপেশি এবং মস্তিষ্কে দুর্বলতা বোধ হয়। শরীরে চুলকানি, শ্বাস কষ্ট ও বমি-বমি ভাব, শীত শীত ভাব অনুভূত হয়। মাথা ঝিম-ঝিম করা, মনোযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ কিডনিকে ভালো রাখতে বেশ কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখলে কিডনিকে আমরা ভালো রাখতে পারব।
নিয়মিত হাঁটাচলা ও শারীরিক পরিশ্রম করুন। কেননা কর্মঠ ও সতেজ শরীরে অন্যান্য যে কোনো রোগ হওয়ার মতো কিডনি রোগের ঝুঁকিও কম থাকে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অবশ্যই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে যে কোনো ব্যক্তিকেই রক্তচাপ রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে। কেননা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সুস্থ থাকতে হলে ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে খাওয়ার প্রতি সচেতন না থাকায় বিভিন্ন কারণে কিডনিতে জমছে টক্সিন। প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু খাবার অবশ্যই কিডনি ভালো রাখতে পারে। সেই খাবার রাখতে হবে পাতে।
তাজা ফল কিডনির জন্য ভালো
তাজা যে কোনও ফল ভালো হতে পারে কিডনির জন্য। আসলে এই খাবারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু কিডনির জন্য উপকারী। তবে কিডনির রোগ ইতিমধ্যেই থাকলে তখন সতর্ক হতে হবে। সেক্ষেত্রে লো পটাশিয়াম যুক্ত ফল খেতে হবে। এই তালিকায় আসবে আপেল, পেয়ারা, ন্যাশপাতি, জামরুল ইত্যাদি।
তাজা সবজি কিডনি পরিষ্কার রাখে
প্রতিটি মানুষের পাতে রাখতে হবে সবজি। এক্ষেত্রে তাজা সবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলের প্রাচুর্য থাকে। তাই এই খাবারটি অবশ্যই খেতে হবে। তবে কিডনির রোগ থাকলে আপনাকে কম পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন ঝিঙে, পটল, চিচিঙ্গে খেতে হবে। এছাড়া খেতে পারেন মাঝারি পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন আলু, ভেন্ডি, পেঁপে, গাজর, শসা, ধনেপাতা ইত্যাদি।
মাংস খান কিডনি ভালো রাখতে
চিকিৎসকের মতে, আসলে কিডনি ভালো রাখতে গেলে প্রোটিন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে খেতে হবে মেদ বিহীন মাংস। খেতে পারেন চিকেন। তবে এড়িয়ে যান কিছু বিশেষ খাবার যেমন রেডমিট, খাসির মাংস ইত্যাদি। এভাবেই ভালো থাকতে পারবেন। নইলে সমস্যা বাড়বে।
কিডনি ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন
প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই পানি পান করতে হবে পরিমিত। এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে কিন্তু কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দিনে অন্তত পক্ষে ৩ লিটার পানি পান করুন। তবে কিডনির রোগ থাকলে পানি পান করতে হবে মেপে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
ডাবের পানি কিডনি সুস্থ রাখে
ডাবের পানিতে রয়েছে ভালো পরিমাণে ইলেকট্রোলাইটস। এই ইলেকট্রোলাইটস কিন্তু কিডনির জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। দেখা গিয়েছে যে আপনি যদি কিডনি সুস্থ রাখতে চান, তবে ডাবের পানি পান করতে হবে। এবার সপ্তাহে একবার বা দুইবার করতে পারেন। আবার চাইলে প্রতিদিন পান করতে পারেন।
ধূমপান, অ্যালকোহল কিডনির অনেক ক্ষতি করে। অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটে। কিডনিকে সুস্থ রাখতে চাইলে ধূমপান, অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। ধূমপান আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দেয়। আর রক্ত যখন কিডনিতে পৌঁছায়, তখন তাদের স্বাভাবিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। কিডনির রোগ সহজে বোঝা যায় না। নীরব ঘাতকের মতো এটি কাজ করে। উপসর্গ বোঝার আগে কিডনির ৯০ শতাংশ খারাপ হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই কিডনির ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন