বিজ্ঞাপন
রাজমিস্ত্রী থেকে স্বর্ণজয়ী কুড়িগ্রামের হাবিব
বিজ্ঞাপন
আনোয়ার সাঈদ তিতু,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
এবারের জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ডের সাথে নতুন মুখেরও সন্ধান মিলেছে। সাথে পুরোনোদেরও আধিপত্য ছিল। তেমনই একজন মাঝারি পাল্লার দৌড়বিদ আহসান হাবিব। এই নিয়ে টানা তিনবার ১৫০০ মিটারে স্বর্ণ জয় করেন তিনি। আর ৮০০ মিটারে দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম হওয়া। অথচ কুড়িগ্রামের এই সন্তানকে জীবনযুদ্বের এক সময়ে রাজমিস্ত্রির কাজও করতে হয়েছিল। এই কস্টকর কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই আহত হন। এর মধ্যে একবার কেটে যায় হাঁটু। সেই আঘাত সারতে কয়েকটি সেলাই নিতে হয়েছিল তাকে। এখন তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অ্যাথলেট। এই বাহিনীতে ২০১৮ সালে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে ল্যান্স করপোরাল হিসেবে কর্মরত।
স্কুল জীবন থেকেই মাঝারি পাল্লার দৌড় খুব আকৃষ্ট করত আহসান হাবিবকে। ফলে স্কুল পর্যায়ে ৮০০ এবং ১৫০০ মিটারেই দৌড়াতেন। কেন এই মাঝারি পাল্লার দৌড়েকে বেছে নেয়া? হাবিবের উত্তর, ‘লং ইভেন্ট সব সময়ই কস্টের। আমি জানি কষ্ট ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। তাই এই ৮০০ এবং ১৫০০ মিটারকে বেছে নিয়েছি। সাফল্যও পাচ্ছি।’ যোগ করেন, শুধু প্রথম বার জাতীয় জুনিয়র মিট ছাড়া বাকী সব দৌড়েই আমি পদক জিতেছি। স্কুল পর্যায়ে কোনো দিনই পদক ছাড়া আসিনি। কখনো প্রথম কখনো দ্বিতীয়।
২০১৬ সালে জাতীয় জুনিয়র মিটে অংশগ্রহণ। সেবার কোনো পদক জেতা হয়নি আহসান হাবিবের। পরের বছরই কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে জুনিয়র মিটে সাফল্য। ৮০০ মিটারে তৃতীয় হওয়া। হাবিবের দেয়া তথ্য, ‘২০১৭ সালের জুনিয়র মিটে তৃতীয় হওয়ার পর নৌবাহিনী আমাকে পছন্দ করে। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছিলাম। নৌবাহিনীতে চাকরি হওয়ার পর আমি আর লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে পারিনি।’
২০১৮ সালে নৌবাহিনীতে চাকরি হওয়ার পর জাতীয় মিটে ৮০০ মিটারের সাথে ১৫০০ মিটারেও দৌড়াতে থাকেন। আহসান হাবিব জানান, আমার নৌবাহিনীর কোচ শফিকুল ইসলামই আমাকে ৮০০ মিটারের পাশাপাশি ১৫০০ মিটারে দৌড়াতে উৎসাহিত করেন। তার বক্তব্য ছিল, আমার বডি ফিটনেস ১৫০০ মিটারের জন্যও উপযুক্ত। ফলে আমি এখন দুই ইভেন্টেই দৌড়াচ্ছি।
দুই ভাই আর বাবা-মাকে নিয়ে মোটামুটি চলছিল হাবিবদের সংসার। কিন্তু ১৫ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে হাবিবের ওপর। পরিবারকেও টানতে হবে। চালিয়ে যেতে হবে লেখাপড়াও। হাবিব জানান, জীবন চালাতে তখন আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করেছি বছর দেড়েক। এ থেকে দিনে পেতাম আড়াইশত টাকা। পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে একটি ফটোকপির দোকানে খণ্ডকালীন চাকরিও করতাম। এতে মাসে বেতন ছিল ১২ শত টাকা।’ এই অল্প টাকাতেও জীবন চালাতে তেমন সমস্যা হচ্ছিল না তার। বললেন, ‘আমাদের উত্তরবঙ্গে জীবন যাত্রার যে মান তাতে এই টাকায় চলে যায়।’ সেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েই এক দিন পড়ে যান হাবিব। জানান, পড়ে গিয়ে আমার হাঁটু কেটে যায়। রক্তও ঝরেছিল। এরপর কয়েকটি সেলাই লেগেছিল।’ একপর্যায়ে খেলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে এখন তিনি দেশ সেরা মাঝারি পাল্লার দৌড়বিদ।
বাংলাদেশে মাঝারি পাল্লার দৌড়বিদদের কদর কম। এশিয়ান গেমস বা অলিম্পিক গেমস ১০০ ও ২০০ মিটারেই আগ্রহ বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্সে ফেডারেশনের। তবে আহসান হাবিব চান ফেডারেশন যেন তাদের এই মাঝারি পাল্লার দৌড়কে গুরুত্ব দেয়। জানালেন, আমি চাই ফেডারেশন যেন ১০০, ২০০ মিটারের পাশাপাশি ৮০০ এবং ১৫০০ মিটারকেও আন্তর্জাতিক গেমসের বহরে অন্তর্ভুক্ত করে। তাহলে আমরাও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম বৃদ্ধির আপ্রান্ত চেষ্টা চালাতে পারবো।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন