বিজ্ঞাপন
একদফা দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ সফল করার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র-জনতার এই কর্মসূচিকে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের যৌক্তিক, ন্যায়সংগত, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। তাদের নতুন কর্মসূচিকে সমর্থন জানাচ্ছি। বর্তমান ভয়াবহ দানবীয় খুনি শাসক গোষ্ঠীর পতনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এর মধ্য দিয়ে অবৈধ সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তথা আপামর জনসাধারণের উত্থাপিত একদফা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে বিএনপি সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছে। শত শত শহিদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ছাত্র-জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী। এই চরম ক্রান্তিলগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জনসাধারণ এবং বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের রাজপথে নেমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে নিষ্ঠুরতা-বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে, তা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পাখি শিকারের মতো নির্বিচারে গুলি করেছে। লাশের পর লাশের স্তূপ সৃষ্টি করেছে। ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। সরকার তাদের এই বর্বরতা আড়াল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কিছু স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মিথ্যা অভিযোগে নিরীহ ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়। আটকাভিযান এখনও চলছে। আন্দোলন দমাতে সান্ধ্য আইন দিয়ে, সেনাবাহিনী নামিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে রাতে বিভিন্ন এলাকায় ব্লক রেড দিয়ে নিরীহ ছাত্রসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আটক করতে গিয়ে বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের না পেয়ে তাদের বাবা, ভাই ও অন্যদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। চলছে গ্রেফতারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজি। নিজেদের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ আড়াল করতেই তথাকথিত তৃতীয় পক্ষ আবিষ্কারের জন্য সরকারের বিরামহীন এই প্রচেষ্টা চলছে। যা জনসাধারণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার আবারও নিরাপত্তা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দিয়ে আরও হত্যা, নির্যাতন, দমন, নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে সমগ্র দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব জনপদ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ বিদ্রোহে মুখরিত। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমজীবী মানুষসহ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে আন্দোলনে শামিল হয়ে গণজাগরণের সৃষ্টি করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণআন্দোলনে পতন অবশ্যম্ভাবী জেনে আওয়ামী লীগ আবার সংঘাত, সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। কারাগারে আটক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, বর্তমান আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাড়িতে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বিএনপি নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও আমিনুল হকের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, শহিদ মিনারে জনতার উত্তাল সমুদ্রের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে। অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। দেশের সব মানুষ এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন